শঙ্খপুর গ্রামের একেবারে শেষ মাথায় ছিল একটি পুরোনো, পরিত্যক্ত বাড়ি। স্থানীয়দের মুখে মুখে এই বাড়ির নাম হয়ে উঠেছিল ‘অভিশপ্ত বাড়ি’। বলা হয়, এখানে রাত হলে অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যায়, জানালার পর্দা বাতাস ছাড়াই উড়ে ওঠে, আর মাঝে মাঝে দেখা যায় এক ছায়ামূর্তি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
একদিন শহর থেকে আসা চার বন্ধু—তন্ময়, রিয়াজ, মিথিলা আর সুদীপ্ত—এই বাড়ির সত্যতা যাচাই করতে বের হলো। তাদের মধ্যে তন্ময় ছিল দুঃসাহসী, রিয়াজ ছিল যুক্তিবাদী, মিথিলা সবসময় গা ছমছমে কাহিনিতে আগ্রহী, আর সুদীপ্ত ছিল সবকিছুকে সন্দেহের চোখে দেখার মতো মানুষ।
রাত নামতেই তারা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। রিয়াজ বলল, “আমরা কি নিশ্চিত এটা করার ব্যাপারে?”
মিথিলা হাসল, “ভয় পেলে এখনই ফিরে যেতে পারো।”
সুদীপ্ত দরজা ঠেলে দিল, সেটি কড় কড় শব্দ করে খুলে গেল। ভেতরে ঢুকতেই সবাই অনুভব করল শীতল বাতাসের স্পর্শ। বাড়ির দেয়ালে শ্যাওলা জমে ছিল, আর মেঝেতে পুরু ধুলো পড়ে ছিল।
“হয়তো পুরনো বাড়ির বাতাস,” রিয়াজ বলল।
ঠিক তখনই উপরতলা থেকে জানালার পর্দা নিজে নিজেই উড়ে উঠলো। হঠাৎ, একটা চাপা চিৎকার শোনা গেল।
তন্ময় বলল, “উপরে চল, দেখে আসি!”
সুদীপ্ত মাথা নাড়ল, “একদমই না! এটা ভালো আইডিয়া নয়।”
কিন্তু তন্ময় আর মিথিলা উপরে উঠতে শুরু করলো। সিঁড়ির মাঝপথে, হঠাৎ একটা অদৃশ্য ধাক্কায় তন্ময় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। ঠিক তখনই, সাদা পোশাক পরা এক নারীমূর্তি ধীরে ধীরে সিঁড়ির উপরে দেখা দিল। তার চোখজোড়া যেন জ্বলছিল, ঠোঁটের কোণে এক বিভৎস হাসি।
সবাই আতঙ্কে একসঙ্গে চিৎকার করল এবং দরজার দিকে দৌড় দিল। কিন্তু দরজা যেন এক অদৃশ্য শক্তি দিয়ে আটকানো ছিল।
তন্ময় এক ঝটকায় জানালার কাঁচ ভেঙে ফেলে সবাইকে বের করে আনলো। তারা পাগলের মতো দৌড়ে গ্রামের দিকে চলে গেল।
পরদিন সকালে স্থানীয় এক বৃদ্ধ তাদের {A} বললেন, “তোরা সৌভাগ্যবান, যারা ঐ বাড়িতে ঢোকে, সবাই ফিরে আসে না। আবার কেউ ফিরলেও, আর আগের মতো থাকে না।”
তারপর থেকে, কেউ আর সেই বাড়ির আশেপাশেও যায় না। একদিন, এক ঝড়ো রাতে বাড়িটি হঠাৎ ধ্বসে পড়ে। কিন্তু রাতের বেলা এখনও কেউ কেউ বলে, বাড়িটির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এক নারীমূর্তি ঘুরে বেড়ায়, তার চোখ দুটো এখনো জ্বলছে।
0 Comments